টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন ?
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:
বয়স বৃদ্ধি: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন কমে যায়। সাধারণত ৩০ বছরের পর থেকে প্রতি বছর টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রায় ১-২% কমে যেতে থাকে।
স্বাস্থ্য সমস্যা: কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ, এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাব টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমাতে পারে।
মাদকাসক্তি: অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান এবং ড্রাগের অপব্যবহার টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
আঘাত বা সংক্রমণ: অণ্ডকোষে আঘাত বা সংক্রমণ হলে টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে।
হরমোনাল সমস্যা: পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা বা অন্যান্য হরমোনাল সমস্যা টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে। যেমন স্টেরয়েড, কেমোথেরাপি ওষুধ এবং কিছু মানসিক রোগের ওষুধ।
জিনগত কারণ: কিছু জিনগত সমস্যা যেমন ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম (Klinefelter syndrome) টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা এবং এটি নির্ণয় ও চিকিৎসা করা সম্ভব। যদি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মেয়েদের হরমোনের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
মেয়েদের হরমোনের সমস্যা হলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যাগুলো বিভিন্ন হরমোনের মাত্রার পরিবর্তনের কারণে হতে পারে, যেমন ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন, টেস্টোস্টেরন, থাইরয়েড হরমোন ইত্যাদি। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
মাসিক চক্রের অনিয়ম: মাসিক চক্র অনিয়মিত হওয়া, খুব বেশি বা খুব কম রক্তপাত হওয়া, পিরিয়ডের মাঝে রক্তপাত হওয়া ইত্যাদি।
প্রজনন সমস্যা: বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
হট ফ্ল্যাশ ও রাতের ঘাম: বিশেষত মেনোপজের সময় এসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ওজন বৃদ্ধি বা ওজন কমাতে পারে।
আবেগের পরিবর্তন: অবসাদ, উদ্বেগ, মেজাজের পরিবর্তন ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চুল পড়া ও ত্বকের সমস্যা: চুল পড়া, ব্রণ, শুষ্ক ত্বক বা চুল, অতিরিক্ত তেলতেলে ত্বক ইত্যাদি হতে পারে।
শারীরিক অসুবিধা: অবসাদ, মাথাব্যথা, পেশীর দুর্বলতা, ক্লান্তি ইত্যাদি।
স্লিপ সমস্যা: ঘুমের সমস্যাও হতে পারে, যেমন ইনসমনিয়া বা অতিরিক্ত ঘুম।
যৌন সমস্যাগুলি: যৌন ইচ্ছার হ্রাস, যোনিপথের শুষ্কতা ইত্যাদি।
হাড়ের সমস্যা: হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
দ্রুত হৃৎকম্প: হৃদপিণ্ড দ্রুত ধাক্কা খাওয়া বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন।
নিপলের সমস্যা: Nipples থেকে দুধ বা অন্য কোনো তরল বের হওয়া।
যদি উপরের কোন লক্ষণ দেখা যায় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তিনি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবেন।
কি কি খেলে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি পায়?
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। নিচে কিছু খাদ্যের তালিকা দেওয়া হলো যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে:
দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যগুলোতে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম থাকে, যা টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সাহায্য করে।
ডিম: ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাট থাকে যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
মাছ ও সামুদ্রিক খাবার: স্যামন, টুনা, সার্ডিনস এবং অন্যান্য মাছগুলোতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি থাকে, যা টেস্টোস্টেরন বাড়াতে সহায়ক।
পালং শাক ও অন্যান্য পাতা সবজি: পালং শাক, কেল ইত্যাদি শাকসবজিতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা টেস্টোস্টেরন বাড়াতে সাহায্য করে।
বাদাম ও বীজ: আখরোট, বাদাম, সানফ্লাওয়ার সিড, ফ্ল্যাক্স সিড ইত্যাদিতে ভালো ফ্যাট এবং জিঙ্ক থাকে, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
মাংস: বিশেষ করে লাল মাংসে জিঙ্ক ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ফল ও শাকসবজি: ব্রকোলি, ফুলকপি, ব্রাসেল স্প্রাউটস ইত্যাদি শাকসবজিতে ইন্ডোল-৩-কার্বিনোল থাকে, যা শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমিয়ে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
দই ও চিজ: দই ও চিজে প্রোবায়োটিক থাকে যা হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ডার্ক চকোলেট: ডার্ক চকোলেটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।
খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যদি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবেন।
টেস্টোস্টেরন এর স্বাভাবিক মাত্রা কত ?
টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা বয়স এবং লিঙ্গের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত, টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক রেঞ্জ নিম্নরূপ:
পুরুষদের জন্য:
- 20-49 বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য: টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক রেঞ্জ 264-916 ন্যানোগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার (ng/dL)।
- 50 বছর বা তার বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য: টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক রেঞ্জ প্রায় 215-878 ng/dL হতে পারে, তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই মাত্রা কমতে থাকে।
নারীদের জন্য:
- 18 বছর বা তার বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য: টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক রেঞ্জ 15-70 ng/dL।
উল্লেখ্য যে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দিনের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে এবং সকালে সাধারণত এই হরমোনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
যদি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম মনে হয় এবং এর ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি সঠিকভাবে নির্ণয় করে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবেন।
টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা বয়স এবং লিঙ্গের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত, রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিচের মতো হতে পারে:
পুরুষদের জন্য:
- 300 থেকে 1,000 ন্যানোগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার (ng/dL)।
মহিলাদের জন্য:
- 15 থেকে 70 ন্যানোগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার (ng/dL)।
পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা 300 ng/dL এর নিচে হলে তা সাধারণত নিম্ন টেস্টোস্টেরন (হাইপোগোনাডিজম) হিসেবে বিবেচিত হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রা প্রজনন স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম বা বেশি হয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তিনি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারবেন।
0 Comments